![]() |
ছবিটি এখানে প্রতিকী হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। |
সম্প্রতি কওমি-ফারেগ তরুণ আলেমদের মধ্যে ভয়ংকর-রকমের একটা ব্যাধি দেখা দিয়েছে; যত্রতত্র এবং যখন তখন মাদরাসা গড়ে তোলা। তাঁদের প্রিন্সিপাল হবার খুব সখ। কেমন যেন তাঁদের মাদরাসা গড়ে তোলার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে মুহতামিম উপাধি লাভ করা।
আমার পরিচিত এক তরুণ আলেম আছেন নোয়াখালীতে। বয়স খুব বেশি হলে সাতাশ -আটাশ হবে। নাহ্ বে মীর পর্যন্ত একটা মাদরাসার মুহতামিম তিনি। জনগণের দান-দক্ষিণায় মাদরাসাটি কোনোমত মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে । মাদরাসার লিল্লাহফাণ্ডে উল্লেখ করার মত তেমন টাকাও থাকে না। চার-পাঁচজন শিক্ষক আছেন। যাদের মধ্যে একজনের বেতন সর্বোচ্চ নির্ধারণ করা হয়েছে সাত হাজার।
আর বাকি সবারটা চার কিংবা পাঁচের মাঝখানে গড়াগড়ি খায়। আবার কোন কোন শিক্ষকের এক দু'মাসের বেতন আসমানে লটকে আছে। কবে তার অবতরণ হবে বলা মুশকিল।
হঠাৎ শুনি তিনি একটু দূরেই আরেকটা মাদরাসা দিয়ে বসেছেন। শুনে খুব অবাক হলাম। সাথে বিরক্তও। যেখানে তার একটা মাদরাসা সক্রিয় রাখতে বারটা বেজে যাচ্ছে, সেখানে আরেকটা মাদরাসার সাইনবোর্ড লটকানোর কী অর্থ থাকতে পারে আমার বোধগম্য হলো না!
এভাবে মাদরাসা গড়ে তোলার পেছনে কী ভেদ এবং কী হেকমত নিহিত আছে আমার বড় জানতে ইচ্ছে করে! ব্যাঙেরছাতার মত হঠাৎ গড়ে ওঠা এসব মাদরাসার লেখাপড়া খুব যে ভালো হয় তা-ও না। সত্যি বলতে গেলে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই কিছু অসাধু ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগেই এসব মাদরাসার প্রতিষ্ঠা।
নোয়াখালীর এই এক আলেমের এমন সমস্যা তা নয়। বরং আমাদের মধ্যে অনেকেই এমন করছেন। যেটা আদৌ উচিৎ হচ্ছে কিনা আমাদের ভেবে দেখা উচিৎ।
লক্ষ করলে দেখবেন, শুধু হেফজখানা, মক্তব খুলেই তারা ক্ষান্ত হয় নি, ইসলামের জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ ইফতা বিভাগ নিয়েও চলছে তাদের মাদরাসা মাদরাসা খেলা।
হ্যাঁ, ইলম যদি সত্যিই আপনার থেকে থাকে। অন্যজনকে হক আদায়করে পড়ানোর যোগ্যতা যদি আপনার থেকে থাকেই, তাহলে মাদরাসা গড়ে তুলতে কোনো আপত্তি নেই। তবে লক্ষ রাখতে হবে মাদরাসার খাবার এবং পড়াশোনা যেন মানসম্মত হয় এবং শিক্ষকদের বেতনের ক্ষেত্রে যেন সংকীর্ণতার দোহাই না দেওয়া হয়।
বড় অবাক লাগে, শেষমেশ দীনিশিক্ষা নিয়েও এমন আচরণ! যাত্রাবাড়ীর অনেক প্রসিদ্ধ একটা মাদরাসায় মোটা অংকের টাকা দিয়ে আমি হিফজ পড়ে ছিলাম। সেখানকার আভ্যন্তরীণ পরিবেশ এবং খাবারের কথা মনে হলে এখনও মুখে বমির উদ্রেক হয়। সেখানে টাকা কম ছিল তা নয়। ছাত্রও কম নয়। তাহলে এই অবস্থা কেন? নীতি ও নৈতিকতার সমস্যা। তারা মাদরাসার সাইনবোর্ড টানিয়েও ব্যবসা করতে চান।
এটা অবশ্যই লজ্জাজনক । এসব লোকদেরকে এখনই আমাদের রুখে দেওয়া উচিৎ। মোটকথা যারাই আমাদের আকাবিরদের আদর্শচ্যুত হয়ে মাদরাসা গড়ে তুলছেন, তাদের মাদরাসার রেকর্ড খুব বেশি ভালো হচ্ছে না। এতে আমাদের নিজেদেরই ক্ষতি হচ্ছে। জনসাধারণ আলেমদের প্রতি বিশ্বাস হারাচ্ছে। এসব গুটিকয়েক অসাধু ব্যক্তির কারণে সমস্ত আলেম সমাজের বদনাম হচ্ছে।
তাই আমাদের সবার সতর্ক থাকা উচিৎ এবং আদর্শচ্যুত ব্যক্তিদেরকে যথোচিত শিক্ষা দেওয়া উচিত।
লেখক: সম্পাদক -ঈশান
1 মন্তব্য
সময়োপযোগী লেখা
উত্তর দিনমুছুন