ছেলেটির ক্যান্সারের ভয়, জানালেন ডাক্তার। তার বাবা নেই। বৃদ্ধা মা অসুখী। ছেলেটি হাফিজে কুরআন এবং মাওলানা। দুই বছর আগে এলো। আমার কাছে থাকতে চায়,পড়তে চায়। আমি তখন জামেয়াতুল খাইর,সিলেটে। তার জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা হলো।
সারাক্ষণ পড়ে থাকতো কিতাব নিয়ে। পুরো জামেয়ায় সে ছিলো ব্যতিক্রম। কী রাত, কী দিন, আছে সে কিতাবে ডুবে। কিন্তু তিন মাসের মধ্যেই শরীর প্রায় অবসন্ন হয়ে গেলো। তীব্র ব্যথায় গোঙানি শোনা যেতো তার। এ দিকে মায়ের অসুখ, এ দিকে নিজে বিপন্ন। এক পর্যায়ে সে মানসিক বিকারের সম্মুখিন হলো ।
তাকে নিয়ে খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম।মুহতারাম শাহ নজরুল ইসলাম দা.বা. সহযোগিতা করতেন তাকে আর করতাম আমি। এ ডাক্তার, ও ডাক্তার... অনেক দৌড়ঝাঁপ হলো। পরিস্থিতি কেবলই খারাপ হয়ে চলছিলো।
তাবড় তাবড় অনেক ডাক্তারের কাছে তাকে পাঠানো হয়। কিন্তু নিতান্ত গরীব জানার পর অনেকেই তার প্রতি অনাগ্রহ দেখান।
মনে পড়লো মুবিন ভাইকে। ডাক্তার Mubin Uddin। কিশোরগঞ্জ সরকারি ম্যাডিকেল কলেজে পড়ান, হাসপাতালে করেন ডাক্তারি। থাকেন উপশহর, সিলেটে। বাড়ী বানিয়াচং হবিগঞ্জে। তাকে কল দিলাম।
বললাম, এক ছাত্রকে পাঠাবো। গরিব কিন্তু অসুখ গুরুতর। বললেন, পাঠিয়ে দেন।
ছেলেটি গেলো। পরম যত্ন ও মমতায় তিনি তার চিকিৎসা করলেন,পথ্য দিলেন। তারপর নিয়মিতই তার খোঁজখবর রাখতেন। প্রতিটি অবস্থা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতেন। তার নিবিড় পরিচর্যায় ছেলেটি সুস্থ হয়ে উঠলো। কী শারিরিকভাবে, কী মানসিকভাবে।
এরপর আরো অনেককেই পাঠিয়েছি তার কাছে। মানসিক,স্নায়ুবিক,মাদকাসক্তি, যৌনজাত রোগ ইত্যাদিতে তার পারদর্শিতা অসাধারণ। সাইকিয়াট্রির একজন নির্ভরযোগ্য ডাক্তার।
নৈতিকতা,খোদাভীতি, মানবিক দরদ ও শাস্ত্রীয় পারদর্শীতা মিলিয়ে এমন একজন পাওয়া খুবই দুরুহ। বিশেষত এই সময়ে, যখন রোগীরা প্রায়ই কষ্ট পান এবং ক্ষতিগ্রস্ত হন বিভিন্ন ডাক্তারের দ্বারা।
সেদিন শুনলাম, মুবিন ভাই কিশোরগঞ্জ থেকে চলে এসেছেন সিলেটে, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চেম্বার মাউন্ট এডোরা হসপিটাল,নয়া সড়কে। (যোগাযোগ - 01740 022855)
গুণী এই ডাক্তার সিলেট ফিরেছেন,এটা সুসংবাদ। কিংবদন্তী মানসিক ডাক্তার আবদুল খালেকের পরে আরেক মানসিক ডাক্তার মুবিন উদ্দীন সিলেটের প্রতি হবিগঞ্জের উপহার। তার চেম্বার হোক রোগীদের নিরাময়ের বিশ্বস্ত ঠিকানা।
জয় হোক সুচিকিৎসার, মানবকল্যাণের!
লেখক, কবি, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবি।
0 মন্তব্য