আমি সেলুনে গেলাম চুল কাটাতে । নাপিত আমার পূর্ব পরিচিত। গত দুই বছরে তাকে ছাড়া আমার চুল কাটানো হয় নি। সে তার অভ্যাসমত অভাবনীয় তরিকায় চুল কাটছিল। পাশেই মধ্য বয়স্ক আরেক নাপিত দাঁড়িয়ে আছে। ও এখনও খদ্দের পায়নি । দু'জনেই বেহারি।পরস্পরে কথা বলছে হিন্দিতে । ইতোমধ্যে অল্পবয়সী একটি যুবক এল সেলুনে। হাতে পলিথিনে মোড়ানো ছোট একটা প্যাকেট। ওদের তিন জনের কথাবার্তায় বুঝলাম এখন যে এলো সে সেলুনের মালিক। একটু পরে আমার যে চুল কাটছিল সে বাদে বাকি দু'জন কোথায় যেন চলে গেল।
নাপিত বলল, জানেন ওরা এখন কোথায় গেল?
আমার সরল উত্তর 'নাতো'!
এর পরে নাপিতটা ভয়ংকর একটা তথ্য দিয়ে চমকে দিল আমাকে । বলল, ওরা নাকি গাঞ্জা খেতে গেছে এবং প্রত্যেকদিন এই সময় এই কাজটা ওরা নিয়মকরে করে থাকে।
সত্যি কথা, সেদিন নাপিতের কথায় আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। অনেকগুলো প্রশ্ন রাতে আমাকে ঘুমোতে দেয়নি। গাঞ্জা ওদের জন্য এতোটা সহজলভ্য? প্রতিদিন হাতের নাগালেই পেয়ে যায়? কিন্তু কেমন করে পায়? প্রশাসন এই খবরগুলো পায় না? ওদের কানে পৌঁছোয় না? নাকি প্রশাসনই ওদের মদদ যোগায়?
আজকে যখন ক্যাসিনোর খবরগুলো পড়ছি তখন মনে হচ্ছে ক্যাসিনোর তুলনায় গাঞ্জা তো কিছুই না।
অনেকের কাছেই ক্যাসিনোটা খারাপ কিছু মনে নাও হতে পারে। কারণ, আমাদের দেশের জন্য শব্দটা একেবারেই নতুন । ক্যাসিনোর বাংলা অর্থ মদ-জোয়া বা নাচের আসর। বাংলার স্থানে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করলে ততোটা অপরাধ বোধ হয় না।
এই ক্যাসিনো দিয়ে আধুনিকতা ও সভ্যতার মোড়কে গোটা বাংলাজাতীকে অসভ্য আর বেহায়াপনায় ডুবিয়ে রাখার ভয়ংকর এক ষড়যন্ত্র চলছে ।
পশ্চিমা-সংস্কৃতিধারী লোকদের মূলত এসব স্থানে যাতায়াত । ক্যাসিনোর ভেতরে যা কিছু আছে তার সবই মানবসভ্যতার জন্য, নীতি ও নৈতিকতার জন্য বড় হুমকির কারণ। আর ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে তো সম্পূর্ণ হারাম। কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের জন্য এইসব নোংরা জায়গায় যাওয়া শোভা পায় না।
এমনিতেই আমাদের দেশে অপরাধের শেষ নেই। মাসে অন্তত ৮০ টারমত ধর্ষণের খবর ছাপা হচ্ছে শুধু প্যাপার পত্রিকাগুলোতেই। এর বাইরেও তো কতো খবর ধামাচাপা পড়ে যায়। এর মধ্যে আবার এই আপদ ।
বাংলাদেশে নব আবিষ্কৃত এই ক্যাসিনোগুলোতে Rab কর্তৃক চলমান গত দুই তিনদিনের অভিযানে ক্ষমতাসীন দলের হর্তাকর্তাদের নামের তালিকাই ভারি হতে দেখা যাচ্ছে। অভিযান ধারাবাহিক চলতে থাকলে জনগণ আরও অনেককেই হয়তো দেখতে পারবে।
গত বুধবার রাজধানীর চারটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালানো হয়। সবগুলোতেই হাত রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের।
যুবলীগের এক নেতার জোয়ার আসরে অভিযান চালানো হলেতো তিনি তার পাতি নেতাদেরকে নিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধেই মাঠে নেমে পড়েন! নিজের ক্ষমতা জাহির করার চেষ্টা করেন । তাহলে বুঝেন, চোরের মা'র কতো বড় গলা!
মূলত রাজধানীর বেশ কিছু ক্লাবের প্রচলিত জুয়ার আসরকে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও নানাবিধ উপকরণ দিয়ে সজ্জিত করে ক্যাসিনোতে রূপ দেয় একদল নেপালি। জুয়া চালাতে তাদেরকে ভাড়া করে আনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কিছু নেতা-কর্মীরা। চুক্তির বিনিময়ে এসব নেপালি কাজ করলেও জুয়ার মূল টাকা কিন্তু যেতো নেতাদের পকেটেই । আর জুয়ার কারবার নির্বিঘ্নে করে যেতে পূর্ণ মদদ করতো পুলিশ প্রশাসন।
আসলে আমাদের পুরো সমাজ ব্যবস্থাতেই পচন ধরেছে। এখন আর অপরাধ করতে কারও হৃদয় কাঁপে না। দিনেদুপুরে সবার সামনে তিন-চারটা লাশ ফেলে দিলেও তেমন কিছু হয় না। কারণ, টাকা আর ক্ষমতাই এখন কথা বলে। সবাই দুর্নীতিটাকেই নিজের পেশা মনে করে। এই ক্যাসিনোগুলোকে যদি এখনই বন্ধ করা না যায় তাহলে আমাদের ছেলেমেয়েরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ওদের ভবিষ্যত নষ্ট হবে।
তাই এই নোংরা আসরগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের সবার এক হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। অপরাধের সাথে জড়িত যেই থাকুক, শাস্তি তাকে দিতেই হবে। নয়তো দেশের আকাশে ঘনকালো আঁধার নেমে আসতে খুব বেশিদিন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে না!
লেখক: সম্পাদক- ঈশান
0 মন্তব্য