![]() |
বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ |
তামাদ্দুন২৪ডটকম:
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার সাথে কারও বক্তিগত শত্রুতা ছিল না। ছিল না জমিজমা নিয়ে কোনো কোন্দলও।
তবুও কেন তাকে হত্যা করা হল? উত্তর খুব সজহ; তার স্বাধীন চেতা মন এবং দেশপ্রেমের জন্য । সে ফেসবুকে সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ চুক্তির সমালোচনা করে স্ট্যাটাস দিয়েছিল।
যদিও সংবাদমাধ্যমগুলো প্রচার করছে আবরার ফাহাদকে মারা হয়েছে শিবির সন্দেহ করে এবং সাধারণ জনগণ মনে করছেন এই ফেসবুক স্ট্যাটাসই তাকে শিবির সন্দেহ করার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
প্রশ্ন জাগে, জাতীয় স্বার্থ বিরুদ্ধ চুক্তির বিরোধিতা কি শুধু শিবির হলেই করতে পারে? অন্যকেউ করতে পারে না?
আচ্ছা আপনারাই বলুন, ভারত-বাংলাদেশের যে চুক্তিটি সম্পন্ন হয়েছে, এটা কি জাতীয় স্বার্থ বিরুদ্ধ নয়? অবশ্যই জাতীয় স্বার্থ বিরুদ্ধ চুক্তি এটি।
ভারত সফরে গিয়ে ফারাক্কা বাঁধের কোনো আলোচনাই আপনি করতে পারলেন না। হিতে ভুলভাল হিন্দি বলে রসিকতা করে এলেন পেঁয়াজের জন্য ! পূজা উপলক্ষ করে ৫০০ টন ইলিশ পাঠালেন। আর ফেনী নদীর পানি দিয়ে এলেন যেঁচে। এদিকে আপনার এমপি মোহদয় ঘোষণা দেন বাংলাদেশের সমস্ত নদীতে নাকি ভারতের অধিকার রয়েছে! আপনিই বলুন, বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে মেনে নিবে এসব? দেশকে সামান্যতম যে ভালোবাসে তার জন্যও তো এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর।
মনে রাখা দরকার, শিবির হলেই নয় বরং একজন দেশ প্রেমিক হলেও ফেসবুকে এমন স্ট্যাটাস দেওয়া যায়। সরকারের অনৈতিক কাজের বিরোধিতা করা যায়। এটা সাংবিধানিক নাগরিক অধিকার।
আবরার শিবির করত, এই কথা যদি মেনেও নেওয়া হয় তবুও প্রশ্ন জাগে আবরারকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অধিকার তাদেরকে কে দিল? তারা এতোটা সাহস কোথায় পেল? তাদের কি শিবির সন্দেহ করে জিজ্ঞাসাবাদ করারও অধিকার আছে?
কতোটা নির্দয় হলে এমন কাজ করা যায়। টানা চার/পাঁচ ঘন্টা তাকে তারই সহপাঠীরা মারধর করে এবং মরার আগ পর্যন্ত মারতেই থাকে।
শুধু এই এক আবরার নয়, অজানা আরও অনেক আবরার আছে যারা ক্যাম্পাসের সরকার দলীয়ও পেটোয়া বাহিনীর বলির পাঠা হয় এবং মুখবুজে সহ্য করে যায়। কারণ তাদের কাছে সুষ্ঠু বিচার নাই। ক্ষমতা আর পেশির দম্ভ নাই।
আমার কাছে খুব খারাপ লেগেছিল, যখন আবরারের বাবা ঢাকা মেডিকেলের মর্গে মৃত ছেলে'র দেহের পাশে দাঁড়িয়ে কেঁদে কেঁদে বলছিলেন
-" আমি আওয়ামীলীগ করি, আমার পরিবারের সবাই আওয়ামীলীগ করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি আমার ছেলে হত্যা'র বিচার চাই!"
আমাদের মধ্যেও অনেকে বলছি, ছেলেটার গোটা পরিবার আওয়ামীলীগ করত। তবুও তাকে মেরে ফেলা হল! তার মানে আবরারের পরিবার যদি আওয়ামীলীগ না করত, তবুও কি তাকে মেরে ফেলা বৈধ হত?
আইন ব্যবস্থা আজ কতোটা প্রশ্নবিদ্ধ! কতোটা ক্ষমতাসীন দলের তাবেদার! যারা খুনি তারাও জানে আবরারের-মত দু'চারটা দেশপ্রেমিককে হত্যা করে ফেললেও তাদের তেমন কিছুই হবে না। এই জন্যই তো, গ্রেপ্তার হওয়ার পরও তাদের মুখে হাসি দেখা যায়।
আরেকটা কথা জেনে রাখা দরকার। আবরারকে যারা পিটিয়ে হত্যা করেছে সেই আততায়ীরা কোনো ব্যক্তি নয়। বরং একটি গোত্র। সেই গোত্রের নাম ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ এমন এক সংগঠন, যারা কিনা শুধু যে নিজেদের ভিন্নমতের লোকদেরকেই হত্যা করে এমন নয়, প্রয়োজনে তারা একই সংগঠনের নিজের বন্ধুকে হত্যা করতেও পিছপা হয় না।
প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিজেদেরই ৩৯ জন কর্মী নিহত হয়। আর ছাত্রলীগের হাতে অন্য দলের নিহত হয় ১৫ জন।
এই যাদের অবস্থা তাদের থেকে আপনি আবরার হত্যার চেয়ে খুব ভালো কিছু আশা করতে পারেন না!
সবশেষে বলতে চাই, আমার দুঃখ বোধের জায়গাটা শুধু আবরারের জন্য নয়, যারা তাকে খুন করেছে তাদের জন্যও। খুনি যারা তারা নিশ্চয়ই জন্মগত খুনি নয়! তাদেরও নিশ্চয়ই পরিবার আছে! তাদের পিতামাতাও তাকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বুয়েটি পাঠিয়েছে! তাদেরও স্বপ্ন ছিল তাদের ছেলে একজন মানুষেরমত মানুষ হবে।
কিন্তু আফসোসের বিষয় হল তারা তাদের শিক্ষকদের কাছ থেকে কাঙ্খিত সুশিক্ষাটা পায়নি। কিংবা বলা যায় গ্রহণ করেনি। গ্রহণ করেছে কলংকমাখা প্রচলিত রাজনীতি এবং রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে। তাই দোষটা শুধু ছাত্রলীগ কর্মীদেরই নয়।দোষ তাদের গডফাদারদেরও। তাদের কারণেই এই খুনিদের পরিচয় আর ইঞ্জিনিয়ার হবে না। হবে একজন ফৌজদারি ক্রিমিনাল। খুনি হিসেবেই।
তাদের মাধ্যমেই মানুষ জানতে পারল, বুয়েটে শুধু মেধাবী ছাত্ররাই পড়াশোনা করে না মেধাবী খুনিরাও পড়াশোনা করে।
লেখকঃ সম্পাদক-ঈশান
0 মন্তব্য