মুহাম্মদ বিন ওয়াহিদ : তামাদ্দুন২৪ডটকম: বই আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। স্বপ্ন দেখা থেকে শুরু করে স্বপ্ন বাস্তবায়নের কৌশল এবং পদ্ধতিও।
আগে প্রচুর বই পড়তাম। মাদরাসায় যখন প্রথম সাময়িক, দ্বিতীয় সাময়িক এবং বার্ষিক পরীক্ষার ছুটি হত। তখন শুধু ব-ই পড়তাম। আর কিচ্ছু করতাম না। কোনো আত্মীয়র বাড়িতেও বেড়াতে যেতাম না। সারাদিন আমার রুমে শুয়ে শুয়ে বই পড়তাম। বাসার সবাই তখন প্রচণ্ড বিরক্ত হত। এতো দিন পরে বাসায় এসেছি, একটু ঘোরাঘুরি করব,খেলাধুলা করব, পাড়ার ছেলেপুলেদের সাথে মিশব, তা না করে কি হাবিজাবি পড়ছি! বেশি বিরক্ত হতেন আমার আব্বু।
আব্বু একদিন আমার গল্প-উপন্যাসের বইগুলো বস্তায় ভরে ছিলেন। চেয়েছিলেন পুকুরে ফেলে দিবেন। কিন্তু কী মনে করে এই কাজটা তিনি আর করেন নি।
আমার মনে আছে, আমি যখন হুমায়ূন ঘোরে আক্রান্ত। হুমায়ূনের বই ছাড়া কিচ্ছু বুঝি না। তখন দিনে একটা করে বই পড়ে শেষ করেছি। বইয়ের চরিত্রগুলো আমাকে খুব টানত। মনে হত আমিও বইয়ের একটি চরিত্র । আমি বই পড়তাম খুব আয়োজন করে। নিরিবিলি পরিবেশে। বইয়ের আবেগ-আনন্দ নিজের ভেতরে ধারণ করার চেষ্টা করতাম এবং পারতামও।
হুমায়ূন আহমেদের 'শঙ্খনীল কারাগার' যখন পড়ে শেষ করলাম তখন অনেক কেঁদেছিলাম। দুই-তিন দিন পর্যন্ত বইয়ের প্রতিক্রিয়া আমার ভেতর রয়ে গিয়েছিল। এই বইটা পরবর্তীতে আরও সাতবার পড়েছি। অবাক হয়েছিলাম , একটা লেখকের একেবারে প্রথমদিকের বইটা কীভাবে এতো ভালো হয়!
হুমাযূনের হিমু সিরিজ যখন পড়ছিলাম তখন তো পুরো হিমুই বনে গিয়েছিলাম। খালি পায়ে হেঁটেছি। পকেটবিহীন হলুদ পাঞ্জাবি পরতে ইচ্ছে করত। কিন্তু পরতাম না। কারণ ইসলাম পুরুষের জন্য হলুদ পোশাক পছন্দ করে না ।
এই হিমু সিরিজের একটা বইতে আছে, হিমু মাঝরাতে একটি বিয়ে বাড়িতে গিয়ে বাসি পোলাও খেয়েছিল। এই বইটা পড়ে আমি এতোটাই প্রভাবিত হয়েছিলাম যে, আম্মুকে বলে পোলাও রান্না করিয়ে সেই পোলাও বাসি করে এর পরে খেয়েছিলাম। হা হা হা।
জানেন, এরপরে আমার ভয়ংকর পেট খারাপ করেছিল। তখন মনে মনে হুমায়ূন আহমেদকে একটু বকাঝকা করেছিলাম।
হিমু সিরিজের আরেকটা বইতে আছে। হিমু মধ্যরাতে ওর খালার বাসায় গেল। গিয়ে দেখে কেউ এখনও ঘুমায়নি। বাসার সবগুলো লাইট জ্বালানো। হিমু গেইটে নক করার সাথে সাথে গেট খুলে দেওয়া হল। কাহিনি অনেক দীর্ঘ। আমি সংক্ষেপে বলে ফেলি। হিমুর কাজিন বাদলের গলায় মাছের কাটা আটকে গেছে। সেই কাটা নামছে না কিছুতেই। অনেক চেষ্টা করেও কাজ হয় নি। এমনকি বিড়ালের পা পর্যন্ত ধরানো হয়েছে তবুও কাজ হয় নি। মাছের কাঁটা বিড়ালের খাবার। এটা বিড়ালকেই দেওয়া উচিৎ। মানুষের খাওয়া অন্যায়। হা হা হা। এটা আমার কথা নয়, হুমায়ূন আহমেদের কথা।
এই গল্প আর বলতে ইচ্ছে করছে না৷ একঘেয়ে ভাব চলে এসেছে। অন্যকিছু বলতে পারলে ভালো লাগত।
ও...মনে পড়েছে। হুমায়ূনের আরেক বইতে আছে
"একটি পাখি, চারটি পাখি, তিনটি পাখি " বলেন তো এই ধাঁধাঁর অর্থ কী?
হুমায়ূনের মত আর কারও বই আমাকে এতোটা আকর্ষণ করেনি ।
বিষয় অনুপাতে এবং ব্যক্তিগঠনের দিক বিবেচনা করে আমার কাছে আহমদ ছফাকে ভীষণ ভালো লাগে।
আহমদ ছফার চিঠিগুলো পড়েছি, অসাধারণ!
শেখার অনেক কিছুই আছে তাতে। অনুপ্রেরণার ভাণ্ডার।
আহমদ ছফার 'ওঙ্কার'টা পড়ে আমি আহমদ ছফার ফ্যান।
তবে আহমদ ছফার বই পড়ার ক্ষেত্রে একটু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এই বই পড়া নিয়ে আমার জীবনে আরও কত যে ইতিহাস রচিত হয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না। অনেক কটু কথা শুনেছি এবং সহ্যও করেছি।
এই হুমায়ূনকে পড়েই আমি লেখালেখি শিখেছি, উপন্যাস লেখার দুঃসাহস করেছি।
হুমায়ূন আহমেদ এখন তো আর বেঁচে নেই। পরপারে পাড়ি জমিয়েছে। তার লেখা পড়ে তার প্রতি সংশয় তৈরি হয় কমবেশি সবারই। সংশয়টা পাঠকের বিশ্বাস নিয়ে নয়। লেখকের বিশ্বাস নিয়ে। শেষ বয়সে হুমায়ূন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে একটা বই লেখা শুরু করেছিল। বইয়ের নাম দিয়েছিল 'নবিজি'। যতোটুকু লিখেছে আমি পড়েছি। অনেক ভালো লেগেছে। তখন মনে হয়েছিল, হুমায়ূন আমাদের লেখক।
আল্লাহ, ওপারে হুমায়ূনকে ভালো রেখো!
লেখক:সম্পাদক-ঈশান
0 মন্তব্য