তামাদ্দুন ডেস্ক : ইসলামের অনন্য ইবাদত পবিত্র হজ। হ্জ উৎসব ও ইবাদত হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়ার ফসল। হজ আমাদের সেই দিনটির কথা মনে করিয়ে দেয়, যেদিন হজরত ইবরাহিম (আ.) তার স্ত্রী হজরত হাজেরাকে শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.) সহ পর্বতবেষ্টিত পবিত্র মক্কার নির্জন মরুতে নিয়ে এসেছিলেন।
জনমানবহীন এ প্রান্তরে তাদের রেখে যাওয়ার সময়, সেদিন তিনি দোয়ায় বলেছিলেন, ‘হে আমাদের প্রভু! আমি আমার বংশধরদের মধ্য হতে একজনকে তোমার পবিত্র ঘরের কাছে পানিহীন ও ঘাসহীন অনুর্বর উপত্যকায় বসবাসের জন্য রাখলাম। হে প্রভু! এটা এ জন্য যে, তারা যেনো নিয়মিত নামাজ কায়েম করে। সুতরাং মানুষের মধ্যে কিছু লোকের হৃদয়কে তাদের প্রতি ভালোবাসাতে পূর্ণ করে দাও এবং ফলমূল দিয়ে তাদের জীবিকার ব্যবস্থা কর যেনো তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে।’ –সূরা ইবরাহিম: ৩৭
সেই থেকে শুরু হয় পবিত্র হজের প্রচলন। মহাবরকতময় ও মহতী এই উৎসবের রয়েছে তাৎপর্যে ভরপুর প্রতীকি নানা দিক। এ উৎসবের নানা আনুষ্ঠানিকতার রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দর্শন, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম নানা লক্ষ্য এবং শিক্ষা। হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো, আল্লাহর প্রকৃত বান্দা বা তার অনুগত দাস হতে আগ্রহী হওয়ার প্রমাণ দেয়া।
হজ মানুষকে সব ধরনের কুপ্রবৃত্তি, শয়তানের যাবতীয় প্ররোচণাকে অস্বীকার করতে শেখায়। যদিও এটা খুব সহজ কাজ নয়। কিন্তু কঠিন হলেও এটা পারতে হবে, কারণ এটাই তো হজের মূল দর্শন। বস্তুত হজ সব ধরনের পাপ বর্জন করতে ও মনকে আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছুর কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত করতে শেখায়। অন্যকথায় সব ধরনের পাপ বর্জনের দৃঢ় অঙ্গীকার হজ কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত।
কিন্তু অনেকেই আছেন যারা অবৈধভাবে উপার্জিত টাকায় হজ করতে যান, হজ থেকে ফিরে এসেও নানাবিধ পাপাচারে ল্পিত থাকেন, সুদ-ঘুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন তাদের বিষয়ে ইসলামি শরিয়ত কী বলে?
স্পষ্ট কথা, অবৈধভাবে উপার্জিত টাকায় হজ কবুল হবে না। কারণ এটা হারাম টাকা। আর হজ থেকে ফিরে এসে আবার অবৈধ উপার্জন বা কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। তার মানে ধরে নিতে হবে যে, হজের প্রভাব ওই ব্যক্তির ওপর পড়েনি।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকা আল্লাহর রাস্তায় দান করলে কোনো প্রতিফল পাওয়া যাবে না। এখন কেউ যদি মনে করেন, শুনেছি; হজ করলে সব পাপ মাফ করে দেয়া হয়। সুতরাং আমার সব মাফ। ভুল, এ ধরনের চিন্তা নিতান্তই বালকসূলভ।
হজ আদায়ের প্রেক্ষিতে ক্ষমা ঘোষণার হাদিসটি হলো, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গোনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে হজ থেকে এ অবস্থায় ফিরে আসে যেন আজই মায়ের গর্ভ থেকে বের হয়েছে। অর্থাৎ জন্মের পর শিশু যেমন নিষ্পাপ থাকে, সেও তদ্রূপই হয়ে যায়।’
হজের ক্ষেত্রে অরেকটি বিষয় বেশি মনে রাখা দরকার তাহলো, হজে যাওয়ার আগেই মানুষের যাবতীয় পাওনা ও হক পরিশোধ করে যাওয়া। এটা কোনো ইবাদতেও মাফ হয় না এমনকি আল্লাহতায়ালাও মাফ করেন না, যতক্ষণ না ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি বা পাওনাদার তা ক্ষমা করেন। ইসলামে মূলনীতি হলো, বান্দার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদী বান্দা ক্ষমা না করলে পাপী ব্যক্তি মুক্ত হতে পারবে না। তাই হজে যাওয়ার আগেই বান্দার হক সম্পর্কে অবগত হয়ে তার সমাধান করে যাওয়া উত্তম।
0 মন্তব্য