![]() |
ছবি : ইকরা বাংলাদেশ স্কুল হবিগঞ্জ |
ইবনে সাবিল-তামাদ্দুন: বাসায় আর বাচ্চাদের ধরে রাখা যাচ্ছে না। এমন বিলাপ করছেন রাজধানীসহ সব শহরের অভিভাবক ও অভিভাবিকাগণ। আর কোনো চিন্তা নয়, ভিন্নকোনো মত নয়। দয়া করে খুলে দিন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। স্কুল বন্ধ থাকায় কী কী ক্ষতি হয়েছে তা আলাপ করে লাভ নেই। আরও কোনো ক্ষতি না হোক সেটাই আপতদৃষ্টিতে দেখতে চাই। ইতোমধ্যেই জানা গেছে, শিগগিরই সীমিত পরিসরে স্কুল খোলা হবে।
আমরা এখন বাসে উঠলে, পার্কে গেলে, রাস্তায় দাঁড়ালে, সংবাদ সম্মেলন করলে, ভোট কেন্দ্রে গেলে, আন্দোলন করলে, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করলে, ফ্রান্সের বিরুদ্ধে মানববন্ধনে দাঁড়ালে-এমন কি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভেও কি কথিত স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে।
মসজিদে, মন্দিরে, জনসমাগমে দেশের দায়িত্বশীলগণ বক্তৃতা করলেও কি স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়? সত্যটা কঠিন। কোথাও সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। ইদানীং মাস্ক না পরার কারণে কড়াকড়ি করা হচ্ছে। ভালো কথা। মানুষকে সচেতন করার জন্য এ পদক্ষেপের প্রশংসা করা যায়। আমরা সবাই বাঁচতে চাই। সুন্দরভাবে বাঁচার জন্যই সরকার সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু শিশুদের নিয়ে এ পর্যন্ত কেন যে স্কুল খোলা হলো না তা আমার বোধগম্য নয়।
এখনো শুনছি, সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তা করা হচ্ছে। এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘আগামী ১৪ নভেম্বরের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে সরকার ভাবছে। ১৫ তারিখ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে নাকি এই ছুটিটি আরো বাড়বে, নাকি কোনো কোনো ক্লাসের জন্য আমরা সীমিত আকারে শুরু করতে পারব, এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছি।’
মাননীয় মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, আপনিই বলুন, বাংলাদেশের আর কি কি অবশিষ্ট আছে, যা নিয়ে সরকার এখনো ভাবছে খুলে দেয়া যায় কিনা। সড়কে আগের মতোই দুর্ঘটনা ফিরে এসেছে। রাজধানীতে আগের চেয়ে আরও ভয়ঙ্করভাবে শুরু হয়েছে যানজট। সরকারি ও বেসরকারি সব অফিসতো ইতোমধ্যেই খুলে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া জনসমাগম হয় এমন প্রতিষ্ঠানও খুলে দেয়া হয়েছে। এ থেকে সিনেমাহল পর্যন্ত বাদ যায়নি। তাহলে কোন কারণে এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বন্ধ থাকবে?
আপনি বলেছেন, ‘সংকটের মধ্যেও আমরা পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পেরেছি, চালিয়ে যাচ্ছি, অবশ্যই এটি আমাদের কোনো আদর্শ পরিস্থিতি নয়। সামনেই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আছে, সেগুলো নিয়েও আমরা বিভিন্নভাবে ভাবছি।’
ভার্চুয়াল উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কিন্তু এ উদ্যোগ বাস্তবিক ক্ষেত্রে কত ভাগ শিশু উপকৃত হয়েছে এর হিসাব সবার কাছেই আছে। শিশু যেমন আমাদের ঘরে আছে তেমনি অনেকে স্কুলের সঙ্গেও জড়িত। সম্পৃক্ত। তাছাড়া এটুআই বা শিক্ষামন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানের পরিচালিত অনলাইন কার্যক্রমেও তা স্পষ্ট হয়েছে। কোনোকালেই অনলাইনে শতভাগ কেন আশি ভাগও শিক্ষাসেবা দেয়া সম্ভব নয়। হয়তো অনেকে বলবেন, অফলাইনেও তো শতভাগ সম্ভব হয় না। কিন্তু অফলাইনে একজন শিশু কোনো ধরনের ডিবাইস ও অর্থ খরচ ছাড়াই স্কুলে শিক্ষাসেবা নিতে পারে। সুতরাং স্কুল বন্ধ রেখে অনলাইন অর্থকড়ি উদ্যোগ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং স্কুল চালু রেখেই ভার্চুয়াল শিক্ষা সেবা চালু রাখা যেতে পারে। এতে বাচ্চারা উৎসাহিত হবে এবং অভ্যস্ত হবে।
মাননীয় মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, আর কোনো আদর্শ পরিস্থিতি তালাশ নয়। এক্ষণি শিশুদের কথা ভেবে স্কুল খুলে দিন। ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, শিক্ষিকা ও অভিভাবক-অভিভাবিকাদের প্রাণের এই দাবি এখনই পূরণ করুন। দয়া করে আর ছুটি বাড়াবেন না।
0 মন্তব্য